Monday, February 21, 2011

Bangla premer kobita- part-1(x-closive)By Nuralom ahmmed


১.

থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক

একলা থাকার খুব দুপুরে

একটি ঘুঘু ডাকুক


২.

দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা

বুঝতে কেন পাছো না ছাই

মানুষ আমি, যন্ত্র না!


৩.

চোখ কেড়েছে চোখ

উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।

16
May
তোমায় আমি-জীবনানন্দ দাশ
Ahasan
তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।

নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে

পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।

তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।

জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।


16
May
বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ
Ahasan

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।


চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।17
May
তোমাকে কবে পাবো?- ইমরান হাসান
Ahasan
তোমাকে আপন করে আবার কবে পাবো বলোতো?
একটি করে দিন চলেযায় তারপর মাস পেরিয়ে বছর,
আমি অপেক্ষায় গুনি সময়ের প্রতিটি প্রহর।
সব বাধা ভেঙ্গে তুমি আমার হবে একান্তই আমার।
আমার আরশিতে বধুবেশে কবে ধরাদিবে বলোতো?
আমি গুনে গুনে ভুল করে আবার যে তা গুনি
কবে হবে শেষ আমার চাওয়া, না তুমি, না আমি জানি।
তবুও আশায় থাকি হয়তো অচিরেই পাবো তোমায়
বেশিদিন হয়তো আর নয়, তুমি আমার হবে নিশ্চয়।
শিয়রে জ্বালিয়ে বাতি দু’জন মিলে জাগব রাতি
হাতে রেখে হাত,আবার কবে বলোতো?
আবার হবে ভালোবাসাবাসি হবে মধুর মিলন দু’ জনে
দু’টি দেহ একহবে, হবে মিলন দুটি মনে-মনে।
বুকের গহীনে পুঞ্জবিত ব্যাথা বেদনা সবহবে অবশান
সখি তোমার তরে সপিব আমার এই মন প্রাণ।
সুখি তোমার দু’চোখে রেখে মোর দুই চোখ
আকুন্ঠে পিয়াবো মর্তলোকের যতআছে সুখ
সখিআবার কবে হবে সেই মুধুর লগন,বলোতো?
বিরহের এই কন্টক বেষ্টিত র্দুগম পথ পাড়িদিয়ে
আমার এই মুরু সম বুকে মুখ লুকিয়ে
ভালবাসার বিশুদ্ধ শরবরে তুমি আবার কবে
অবগাহন করিবে বলোতো?

17
May
যদি তুমি চাইতে- মো: রুহুল আমিন
Ahasan
যদি তুমি চাইতে
ছিনিয়ে আনতাম আমি তোমাকে
ঝড়, বৃষ্টি প্লাবন তোমাকে আটকে রাখার মত
যত নর পশুর বাঁধা আসুক না কেন?
সব কিছু ভেঙ্গে চুড়ে হৃদয়ের বন দিয়ে
বেধে আনতাম আমি তোমাকে।
যদি তুমি চাইতে
গড়তে পারতাম একটা সুখের নীড়
স্বপ্নের ভালবাসা হতো বাস্তবের সম্মুখীন
কত যে, স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়ে হৃদয়হীনা পাষানীর মতো
চলে গেলে আমায় ফেলে।
যদি তুমি চাইতে
অথৈ সাগর আমি দিতান পাড়ি
তুমি সাগর হয়ে আমায় ভাষাতে
আমি অনিন্দসুন্দর তোমার বুকে সুখের প্রহর কাটাতাম
আমি মেঘ হয়ে আকাশের বুকে চলে যেতাম
আবার বুষ্টি হয়ে নেমে আসতাম তোমার বুকে
এত ভালবাসারই প্রতিদান তুমি দিলে, আমায় ভুলে

17
May
কষ্টের মুল্য কে দেবে -দিনা
Ahasan
আজ ত্রকাকী র্মুহুতে শুধু তোমার কথা মনে পড়ে
তোমার সাথে আমার প্রতিটি স্মৃতি
খনে খনে দোলা দেয় ।
ত্রকাকী জীবন খুবই কষ্টের, খুবই বেদনাদায়ক, খুবই মর্মান্তিক
ত্রইসব স্মৃতি যতই ভুলে যেতে চাই
ততই মনে পড়ে ।
তোমার শরীরের প্রতিটি অংগে অংগে
আমার র্স্পশের ছোয়া
আমার র্স্পশে তুমি পাগল হয়ে যেতে
বলতে আরও ছুঁয়ে দাও, আরও কাছে আসো
আরও আলিংগন করো ।
তোমার মলিন ঠোঁটে ছুঁয়ে দিতাম আমার আবেগের ঠোঁট
ঠোঁটে ঠোঁটে দুজনে হারিয়ে যেতাম বহুদুরে ।
জানি না আজও কি তোমার মনে পড়ে তা
আমি তো পারছিনা ভুলতে, কিছুতেই ভুলতে
আমাদের ভালবাসার ছোঁয়া ভালবাসার প্রতিশ্রুতি
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আশা ।
হায়রে বিধাতা কেন মোদের করলে নিরাশা
কি অপরাধ করেছি আজও যে কষ্ট পাই
ত্রই কষ্টের মুল্য কে দেবে
কে দেবে ।।


17
May
তোমাকে আসতেই হবে -মিলন মেহ্দী
Ahasan
......মৃত্যুর মত সত্য তুমি আসবে
আমার ভালোবাসার উষäতায় গলে গলে
বহমান নদী হয়ে অনন্ত মোহনায় €
......তোমার কতটা উষäতা লাগবে বলো
থার্মোমিটারের পারদের শেষ চিহ্ন পর্যন্ত
আমি ততক্ষণও থাকবো তোমার অপেক্ষায়।
.......তুমি আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে
আস ষড় ঋতুর রঙ রূপ নিয়ে
কিসের স্বাদহীনে আমাকে ঘিরে বিষন্নতা।
......আজ আমি সাগর মহাসাগরের উপরে
উড়ন্ত চাতক, সুখ-শান্তি জলের চাবুক পেতে
চীনের প্রাচীর তব হৃদয়ে, ভাঙবে আমার­
ভালোবাসার পবিত্রতা ।


16
May
আকাশনীলা -জীবনানন্দ দাস
Ahasan
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা;
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর|

কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ;
তার প্রেম ঘাস হয়েসুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা;
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর|

কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে!
আকাশনীলা জীবনানন্দ দাস
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ;
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে|

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস;
বাতাসের ওপারে বাতাস-
আকাশের ওপারে আকাশ|


16
May
সত্যবদ্ধ অভিমান-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
Ahasan
এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আামি কী এ-হাতে কোনো পাপ করতে পারি?
শেষ বিকেলের সেই ঝুলবারান্দায়
তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো
যেন এক টেলিগ্রাম, মুহূর্তে উন্মুক্ত করে
নীরার সুষমা
চোখে ও ভুরুতে মেশা হাসি, নাকি অভ্রবিন্দু?
তখন সে যুবতীকে খুকী বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়-
আমি ডান হাত তুলি, পুরুষ পাঞ্জার দিকে
মনে মনে বলি,
যোগ্য হও, যোগ্য হয়ে ওঠো-
ছুয়ে দিই নীরার চিবুক
এক হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ-হাতে আর কোনোদিন
পাপ করতে পারি?
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালবাসি-
এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায়?
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনেপড়ে বিষম জরুরী
কথাটাই বলা হয় নি
লঘু মরালীর মত নারীটিকে নিয়ে যাবে বিদেশী বাতাস
আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবে সবগুলো সিঁড়ি
থমকে দাঁড়িয়ে আমি নীরার চোখের দিকে····
ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার, যেন মায়াপাশ,
সত্যবন্ধ অভিমান-চোখ জ্বালা করে ওঠে-
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালবাসি-
এই ওষ্ঠ আর কোনো মিথ্যে কি মানায়?

ay
ভালোবাসা-মঞ্জুষ দাশগুপ্ত
Ahasan

হাত পেতে আছি দাও

চোখ পেতে আছি দাও

বুক পেতে আছি দাও


অবহেলা দাও অপেক্ষা দাও

বিশবাঁও জলে

আমাকে ডোবাও

তুলে এনে ফের

আমাকে ঘোরাও

যাক ঘুরে যাক

নাগর দোলাও

দাও তুমি দাও অপমান দাও

চাও বা না চাও নাও

পুড়ে খাঁটি সোনা নাও

আঁচলে বেঁধো না তাও


এতো তুচ্ছতা প্রাপ্য আমার?

সিঁড়ি খুঁজে চলি নরকে নামার।

অন্ধ ভ্রমর গেঁথেছে অমর

শব্দপুঞ্জ ডানায় তোমার

কী অর্থ তার বুঝবে কী আর!

সিঁড়ি খুঁজে চলি নরকে নামার।

শুধু ধ্রুবপদ তোমাকে দিলাম

ভালোবাসা নাও ভালোবাসা নাও

তোমার জন্য জীবন নিলাম

করেছি বলেই

শুধু শূন্যতা বিনিময়ে দাও…


হাত পেতে আছি দাও

চোখ পেতে আছি দাও

বুক পেতে আছি তাও…

16
May
চিল্কায় সকাল -বুদ্ধদেব বসু
Ahasan

কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়

কেমন করে বলি?

কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,

যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান

দিগন্ত থেকে দিগন্তে;


কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;

চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,

মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।


তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,

স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।

গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,

কেমন করে বলি?


আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায়না।

গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত!

-তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো

যা এতদিন পাইনি?


রূপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে; সমস্ত আকাশ

নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকের উপর

সূর্যের চুম্বনে।-এখানে জ্ব’লে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধণু

তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে

কখনো কি ভেবেছিলে?


কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম

দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে

জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার

কী ভালো লেগেছিল।


তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ মুখ। দ্যাখো, দ্যাখো,

কেমন নীল এই আকাশ-আর তোমার চোখে

কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম

কেমন করে বলি।

16
May
কথা -প্রেমেন্দ্র মিত্র
Ahasan

তারপরও কথা থাকে;

বৃষ্টি হয়ে গেলে পর

ভিজে ঠাণ্ডা বাতাসের মাটি-মাখা গন্ধের মতন

আবছায়া মেঘ মেঘ কথা;

কে জানে তা কথা কিংবা

কেঁপে ওঠা রঙিন স্তব্ধতা।


সে কথা হবে না বলা তাকে:

শুধু প্রাণ ধারণের প্রতিজ্ঞা ও প্রয়াসের ফাঁকে ফাঁকে

অবাক হৃদয়

আপনার সঙ্গে একা-একা

সেই সব কুয়াশার মত কথা কয়।

অনেক আশ্বর্য কথা হয়তো বলেছি তার কানে।

হৃদয়ের কতটুকু মানে

তবু সে কথায় ধরে!


তুষারের মতো যায় ঝরে

সব কথা কোনো এক উত্তুঙ্গ শিখরে

আবেগের,

হাত দিয়ে হাত ছুঁই,

কথা দিয়ে মন হাতড়াই

তবু কারে কতটুকু পাই।


সব কথা হেরে গেলে

তাই এক দীর্ঘশ্বাস বয়,

বুঝি ভুলে কেঁপে ওঠে

একবার নির্লিপ্ত সময়।


তারপর জীবনের ফাটলে-ফাটলে

কুয়াশা জড়ায়

কুয়াশার মতো কথা হৃদয়ের দিগন্তে ছড়ায়।

16
May
শুধু তোমার জন্য-নির্মলেন্দু গুণ
Ahasan

কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে

গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।

তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও

কতবার যে আমি সে কথা বলিনি

সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।

তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য

দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম

আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ

‘এই ওঠো,

আমি, আ…মি…।‘

আর অমি এ-কী শুনলাম

এমত উল্লাসে নিজেকে নিক্ষেপ করবো তোমার উদ্দেশ্যে

কতবার যে এরকম একটি দৃশ্যের কথা আমি মনে মনে

কল্পনা করেছি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন।

আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,

আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য,

আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।

তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,

আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।

16
May
দুঃসাধ্য-নাজিম মাহমুদ
Ahasan

বড় বড় ত্যাগ যতো সহজ

ছোটো ছোটো ত্যাগ ততোই কঠিন

বড় ত্যাগে এক ধরনের অহম আছে

ছোটো ছোটো ত্যাগে কোনো ঘোষনা নেই

বড় ত্যাগ প্রত্যাশা করে সহস্র সাধুবাদ

মানুষের করতালি ইতিহাসে স্বাক্ষর

ছোটো ছোটো ত্যাগ কিছুই চায় না

সহজাত সে এক প্রবৃত্তি

দারুন গরমে ট্রেনে জানলার সীট

প্রচণ্ড ভীড়ে বাসের আসন

দীর্ঘ কিউতে নিজ স্থান

অনায়াসে সে ছেড়ে দেয় অচেনা কাউকে

তাঁর প্রয়োজন বেশি একথা ভেবে-

বড় ত্যাগে বড় বড় ইমারৎ ওঠে

হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ-এতিমখানা

ছোটো ছোটো ত্যাগ স্ফুলিঙ্গের মতো

একটু জ্বলেই ফুরিয়ে যায়

কেউ তাকে মনেও রাখে না

না যে ছাড়ে, না যে পায়

তবুও অভ্যেসবশত ছোটো ছোটো ত্যাগ

বৃষ্টিতে ছাতা মেলে দেয় অন্যকে

আহার্যের ভাগ দেয় সহযাত্রীকে

কারো অসুবিধায় এগিয়ে যায় দু’পা

বড় ত্যাগ কখনো সখনো কেউ কেউ করে

মানুষের মতো মানুষ না হয়েও তা সে পারে

ছোটো ছোটো ত্যাগের লেখাজোকা নেই

প্রাত্যহিক জীবনের এইসব টুকরো টুকরো ত্যাগ

একজন মানুষকে সনাক্ত করে মানুষ বলে

সেই মানুষ হওয়া সত্যিই সহজ নয়।

16
May
অলৌকিক প্রতিশোধ-কৃষ্ণা বসু
Ahasan

ব্যস্ত সমাজের থেকে কবিতার নির্বাসন হয়ে গেছে কবে।

সফল ও সুখী মানুষেরা আজকাল কবিতার ধারও ধারে না,

তারা সকলেই সবকিছু বোঝে, বোঝে জীবনবীমার গল্প;

বোঝে হাসিখুশি, সুড়সুড়ি-মাখা, টিভি সিরিয়াল;

বোঝে ঝোপ বুঝে কোপ মারা, বোঝে হর্ষদ মেহেতা,

বোঝে কতখানি ধান থেকে জন্ম নেয় ঠিক কতখানি চাল,

শুধু কবিতা বোঝে না, বোঝে না যে তার জন্য

লজ্জা নেই কোনও,

সুপ্রাচীন সুতীব্র আর্তিতে ভরা মায়াবী শিল্পের দিক থেকে

সম্পূর্ণ ফিরিয়ে পিঠ বেশ আছে সুসভ্য প্রজাতি।


শুধু মাঝে মাঝে খুবই নির্জনে কোনও এক পবিত্র মুহূর্তে

প্রাণের ভিতর দিকে বেজে ওঠে বাশিঁ, অলৌকিক সেই বাশিঁ।

রন্ধনে ব্যসনে ব্যস্ত সুখী গৃহকোণ কেঁপে ওঠে,

বিস্মৃতা রাধার সমস্ত হৃদয় জুড়ে কোটালের বান ডাকে

উথাল পাথাল, খুব মাঝে মাঝে এরকম হয়, হয় নাকি?


ভুলে যাওয়া অতিপূর্ব প্রপিতামহের মতো রক্তের

ভিতরে ঢুকে পড়ে

কবিতার অসম্ভব বীজগুলি প্রতিশোধ নেয়।

সব কিছু সমস্ত অর্জন সুখ-স্বস্তি-স্বচ্ছলতা অর্থহীন মনে হয়।


বাশিঁ ডাকে, বাশিঁ বাজে, সেই বাশিঁ বাজে,

জীবন আচ্ছন্ন করা বাশিঁ বাজে যমুনা-পুলিনে।

16
May
নিঃসঙ্গতা-আবুল হাসান
Ahasan

অতটুকু চায়নি বালিকা!

অত শোভা, অত স্বাধীনতা!

চেয়েছিল আরো কিছু কম,


আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে

বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল

মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!


অতটুকু চায়নি বালিকা!

অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!

চেয়েছিল আরো কিছু কম!


একটি জলের খনি

তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল


একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

16
May
গোপনতা-অরুণ মিত্র
Ahasan

নানা গোপনতার মধ্যে আমি বাস করি,

আমার পায়ের আঙুলে রেগে নুড়ি বাজলে আমি শুনি ঝর্ণা

সে-আওয়াজ কি আর কারো কাছে পৌঁছয়?

একটা ঝিঁঝির ডাক যেই ওঠে সারা বন অন্ধকারে দুলতে থাকে

আর সারা শুন্য গাছপালার কথা চালাচালিতে ভরে যায়,

ছড়িয়ে পড়ে অরণ্যের ছায়া তারপর কাঁকরমাটির সবুজ

পাহাড় আঁকড়ে-ধরা শেকড়ের খবর আসে,

আমি তা বুকে চেপে রাখি। কেউ কি তা জানে?

কেই-বা জানে আমার রাজ্য-সমাচার?

অনেক গোপনতা ধরে রাখার ফন্দিও আমার অনেক,

যখন চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে শিরাতন্তু থেকে

আমি হোহো হাসিতে চমকে দিচ্ছি আকাশ,

দ্যাখো দ্যাখো কী ফুর্তিবাজ বলে কত হাততালি জোটে

তখন আমি যেন জয়গর্বে আরো ফুর্তিবাজ হয়ে উঠি,

আমি যে সময়ের চকচকে ধারের উপর পা রেখে হাঁটছি

আমি যে এগিয়ে যাচ্ছি প্রকাণ্ড পাথরচাঙের ফাঁকে

সে-কথা কাওকে আমি জানতে দিই না। কেন দেব?

আমি তো জীবনমরণ খেলায় কাওকে আমার শরিক করিনি।

আমার গোপনতা নিয়ে আমি আছি

সবাই দেখছে চিকচিক চোখের কোণ ঠোঁটের বাঁকা টান

আর আমি দেখছি মুহুর্মুহু মেঘবিদ্যুৎ

বুকের মধ্যে শুনছি সমস্ত ওলটপালটের বাজনা,

গোপনতায় আমি বুঁদ হয়ে আছি।

16
May
গুচ্ছ কবিতা- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
Ahasan

১.

থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক

একলা থাকার খুব দুপুরে

একটি ঘুঘু ডাকুক


২.

দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা

বুঝতে কেন পাছো না ছাই

মানুষ আমি, যন্ত্র না!


৩.

চোখ কেড়েছে চোখ

উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।

16
May
তোমায় আমি-জীবনানন্দ দাশ
Ahasan
তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।

নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে

পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।

তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।

জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।

16
May
বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ
Ahasan

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।


চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

1 comment: